Tuesday, December 18, 2018

রাতুল এবং করতোয়া (পর্ব - ০৫)


মানুষ নিজের সত্য বয়স বলার চেয়ে বয়সের সীমাবদ্ধতা প্রকাশে বেশি আগ্রহী।
যেমন আপনার বয়স ২৯ না বলে আপনাকে যুবক বললে, আপনার মধ্যে দারুণ তৃপ্তি কাজ করবে।
আর মেয়েদের ক্ষেত্রে সে তৃপ্তি দ্বিগুণ হারে দীপ্তিমান। অবসর সময়ে এটা বলে পছন্দের কারো সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে পারেন।
আমার ইচ্ছে ছিলো রাতুলকে কিশোর হিসেবে লোকে চিনবে। বয়সে কী আসে যায়?
একজন কিশোরের সবচেয়ে বড় পরিচয় তার শারীরিক পরিবর্তন।
আমাদের রাতুলের মধ্যে সম্ভবত টেস্টোস্টেরনের এন্ড্রোজেনের জীবনযাত্রা শুরু হয়েছে। খামোকা আয়নার সামনে দাড়িয়ে চেহারা দেখে কয়েকবার করে। তাছাড়া, নিয়মিত মিলন বাবুর নরসুন্দরের দোকানটার দু'পাশের গ্লাসে একবার ডান আরেকবার বাম বাহু উত্তোলনের মাধ্যমে নিজেকে বড় জাহিরে ভেতরে ভেতরে তার মগ্নতা দেখা যাচ্ছে।
সে যাই হোক, রাতুল কিন্তু বয়সের আগেই বড় হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছে। থাকাও উচিৎ।
কারণ, জনগণের সমাজই রাতুলদের বড় করে ভীষণ তাড়াতাড়ি। লোকে ইতোমধ্যেই জেনেছে রহমান সাহেবের স্ত্রীর হদিস মিলছেনা। সম্ভবত, সংসার ভেঙেছে।
বড় লোকের সংসার ভাঙা-গড়া নিয়ে মানুষ প্রশ্ন তোলেনা।  কারণ, প্রশ্ন সেখানেই তোলা যায় যেখানে 'পাত্তা' অন্তর্নিহিত। শতকোটি টাকার ব্যবসায়ী রহমান সাহেবের কাছে মানুষের প্রশ্ন কোন লোমও ছিড়তে পারবেনা সেটা সকলেরই জানা। তাই বাসায় বউ নাকি কাজের মেয়ে নিয়ে দিব্যি দিন কাটাচ্ছে তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। চুপচাপ যে যেভাবে পারে হজম করে। ঠিক যেমন করে দেখেও না দেখার ভান করে থাকে কতিপয় কাপুরুষেরা!
প্রায় তেরদিন হলো ঘরের বাইরে কিশোর রাতুলের অবস্থান। বলা যায়, রাত-দিনে পুরোটাতেই মায়ের সন্ধান করে চলেছে সে। কোথাও নেই তার প্রিয় মা। নাটাইয়ের মতো মা তাকে আপনছায়ায় রাখতো কিন্তু অনেকটা সুতোছেড়া ঘুড়ির মতো আজ অজানায় হারিয়ে গেছে। স্টেশনের কারো ব্যাগ বয়ে নিয়ে কিছু টাকা পায় সেটা দিয়ে মাঝেমাঝে খাওয়া হয়। কাজ না পেলে শুধু পানি পান করেই পার করে দেয় রাতুল। একেবারে ভালো না লাগা সত্ত্বেও বাসায় ফিরে যাওয়ার কোন ইচ্ছে তার বেঁচে নেই। স্টেশনটাই যেন প্রিয় ঘরে রুপ নিয়েছে। রাস্তার শত মানুষদের সাথে ঘুমের ঘোরে হঠাৎ মনে হয়, মা ফিরে এসেছে কোন ট্রেনের মতো।সারাদিন অফিস করে ফেরা কোন চাকুরীজীবীর মতো। পাখিদের মতো বা রাস্তার ধারের নিয়ন-সোডিয়াম আলোর মতো। সবই ফেরে এমনকি রাতুলের ঘুমও ফেরে জাগ্রতায়। ফেরে না শুধু রাতুলের ভালোবাসার মা।সায়রার প্রেম এতটাই শক্তিশালী যে, রহমান সাহেবের মনে স্ত্রী-সন্তানের জন্য মায়ার কোন অংশই আজ অবশিষ্ট নেই। মায়া এবং মেয়ে এ শব্দ দু'টো যেন আপন ভাইবোন। আপনি অধিকাংশ পুরুষে প্রেম পাবেন কিন্তু মায়া পাবেন না! মায়া আর প্রেমে অল্প হলেও পার্থক্য আছে বলে আমার মনে হয়। প্রেম ক্রমশ বৃদ্ধমান যেখানে মায়া চিরস্থায়ী। প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ বলে গেছেন-
'ব্যবহার করা কপালের টিপটার আঠা নষ্ট হলেও মেয়েরা সেটা যত্ন করে রেখে দেয়। একজোড়া কানের দুলের একটা হারিয়ে গেলেও অন্যটা ফেলে না।
পুরাতন শাড়িটা, ভাঙা চুড়িটা, নষ্ট হয়ে যাওয়া মোবাইল টা কাজে লাগবেনা জেনেও তুলে রাখে,সবকিছুর কারণ হল মায়া। মেয়েরা মায়ার টানে ফেলনা জিনিসও ফেলে না।'
লেখার খাতিরে কিছু চিরন্তন সত্যের প্রকাশ হোক।
একজন মেয়ে স্বাধীনতার সবটুকু ছেড়ে মায়ার টানেই নারী হয়ে যায়। দায়িত্ব নেয় কোন পরিবারের, সমাজের, সর্বোপরি পুরো দেশের।  আগলে রাখে স্বামী, সন্তান, শশুড়-শাশুড়ীসহ পরিবারের সবাইকে। গড়ে তুলে স্থায়ী মায়ার বাঁধন। অথচ, রহমান সাহেবদের প্রায়শ দেখা যায় প্রেমবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে যেখানে উদরে জন্মানো মায়াটাকে টার্গেট করে দুর্বার এগিয়ে চলে কোন নারীর মায়া স্থায়িত্বকরণের প্রতিযোগীতা।রহমান সাহেবেরা সায়েরাদের তুলুন যৌবনের কাছে বারংবার আছাড় খেলেও আয়েশারা স্বামীহারা হয়েও মায়া খোঁজে ফেরে। এটাও ঠিক, পৃথিবীর সব নারীই আয়েশা নয় আবার সব পুরুষও নন মিষ্টার রহমান।

ছবিঃ ইন্টারনেট
চট্টগ্রাম
২০/১১/২০১৮

রাতুল এবং করতোয়া (পর্ব - ০৪)



রহমান সাহেব পত্রিকা হাতে হেলানো চেয়ারে বসে পা নাড়াচ্ছেন এবং আর কিছুসময় পরপর চায়ে চুমুক দিচ্ছেন।
সুন্দর গোছানো পরিবারকে আপনহস্তে গলা টিপে মেরে ফেলেছেন। অথচ, তা নিয়ে মোটেও দুশ্চিন্ত নন তিনি! প্রফেশনাল চোর থেকে শুরু করে খুনি পর্যন্ত যে কেউ আর যাই হোক দুশ্চিন্তাকে সাথী করতে পারেননা।
রহমান সাহেবের আচমকা এ মানসিক পরিবর্তন খুব দ্রুত হলেও একদম নতুন নয়।
আয়েশার সাথে সাড়ে চারবছর প্রেমশেষে বিয়ে হলেও তিনি সাধারণত সুন্দরী নারীদের রুপের খদ্দের ছিলেন সে বয়স থেকেই। রাতুলদের জন্মের আগে পরে কত সময়েইতো নেশা করে বাড়ি ফিরতেন এ ভদ্রমুখের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রহমান সাহেব।
এলিটের বেশে দেশে-বিদেশে ঘুরেঘুরে কত রোমান্সকর কাহিনীইনা করে বেড়াতেন তিনি। সব জেনেও আয়েশা চুপ থেকেছিলেন।
আসলে, আয়েশাদের চুপ থাকতে হয়। ছেলেমেয়েদের নিষ্পাপ চেহারাগুলোর দিকে তাকিয়ে হলেও আয়েশারা চুপ থেকে যায় এ সমাজে।
কেবল চুপ থেকে কি আর পার পাওয়া যায়?
- মোটেওনা।
তাদের সহ্য করতে হয় মানসিক শত যন্ত্রণা। শারীরিক নিপীড়ন।
আয়েশা জীবনে একটাই ভুল করেছিলেন। সেটা হচ্ছে, রহমান সাহেবের মতো একটি অসামাজিক কীটকে জীবনসঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করা।
সে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত কত নির্মমভাবে উপস্থাপিত হতে পারে তা দর্শকমহলে খুব একটা টনক নাড়ার কথা না!
এ সকল নির্মমতা সংবাদ মাধ্যমের ভেতরের কোন পাতার হেডলাইনেই চাপা পড়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাতাটাও উল্টানো হয়না।
আয়েশারা উঁচুতলার হলে হয়তো সংবাদমাধ্যমে দু'একবার নাড়ানাড়ি হয়। এরপরে ঠিকই চুপচাপ।
কারণ, আমরা আজকাল স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদিতে আগ্রহ খুঁজে পায়না।
আমাদের আগ্রহ কেবল বিনোদন আর খেলার পাতাকে ঘিরেই। মেসি সেরা নাকি রোনালদো!
বর্তমানের আমরা ফেইসবুক ইস্যু আর খেলা ছাড়া আর কীসে আছি?
শত প্রতিবাদ-হুমকি, ভালোবাসা-ধর্ষণ সবইতো আজকাল আমরা ফেইসবুকেই করি!
তাও ছোট্ট একটা মন্তব্য বা ম্যসেজের ঘরে!
জাতি হিসেবে আমরা যেমন সারাবিশ্বে নিজেদের ভালো কিছু দিয়ে উপস্থাপিত হয়েছিলাম, তেমনি নিজেদের থার্ডক্লাস একটিভিটি আমাদের সর্বনিম্মে নিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
যে আয়েশাকে 'আমি তোমার সাথে বুড়ো হতে চাই' বলে আপন করে নিয়েছিলো, সে আয়েশাকে ছেড়েই দিব্যি ভালো কাটছে রহমান সাহেবের অন্যনারীর স্পর্শে জাগানিয়া সময়গুলো।
প্রতিবাদী সব কন্ঠস্বর চুপ হয়ে যায়। চুপ হয়ে গেছে আয়েশাও 'হারিয়েছে হারিয়েছে' টাইটেলে।
করতোয়া নদী। এ নদী কিন্তু একেবারে চুপ থাকার নয়। রাতুলদের গল্পই শুধু নয়, এ নদীতে আরো কতশত বোবা গল্প যে বাঁধা আছে!

ছবিঃ ইন্টারনেট

রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম
১৪/০৬/২০১৮

রাতুল এবং করতোয়া (পর্ব - ০৩)



করতোয়ার পাড়ে বসেই সহস্রবার বোঝার চেষ্টা করেও বাবার অস্বাভাবিক মন্দনের কোন কিনারা খুঁজে বের করতে পারেনি রাতুল।
মানুষের বাহ্যিকের চেয়ে নাকি মনের পরিবর্তন দ্রুত ঘটে।
সম্ভবত, রাতুলের বাবারও এমন হয়েছে!
৪৭ বছরের আধবুড়ো যেন ১৭ বছরের টগবগে যুবকে রুপ নিতে চাচ্ছে!
বাবা প্রথম যেদিন দ্বিতীয় মাকে ফ্রিকোয়েন্টলি এসএমএস-কল দিচ্ছিলো, সেটা রাতুলসহ বাসার সকলেরই বোধগম্য হওয়ার মতোই। তবে বাবা কি সবাইকে জানিয়েই যুবক সাজতে চেয়েছিলেন?
মিসেস সায়রাকে রাতুলের মা ডাকতে মোটেও পছন্দ না। নিজের মায়ের আচলের সুখ কি পরপুরুষে মত্ত্ব মিসেস সায়েরার কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব!
মা ডাকুক না ডাকুক তাতে কী আসে যায়?
রিটায়ার্ড স্বামী প্রফেসর কামাল হোসেনের প্রতি তিনি আর কতোইবা যত্নশীলা হবেন?
উত্তরপত্রে কিছু নাম্বার বাড়তি পাওয়ার খাতিরে ২১ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীর সাথে স্যারদের প্রেম হতেই পারে! তাই বলে শেষমেশ বুড়োটাই কপালে জুটবে সেটা কি আর সায়রার জানা ছিলো?
সবেতো ৩৫। বাকিটা নাহয় নিজের সুখ নিশ্চিত করতে এলিট পার্সোনালিটির মি: রহমানের খাটেই কাটিয়ে দেয়া যাবে। বেশ কয়েকবছর ধরে এমন কাউকেই তো খুজছিলেন তিনি।
রাতুলের মা অবশ্যই প্রথম থেকেই এসব ব্যপারে আর কোন অগ্রগতি না দেখার ব্যপারে রহমান সাহেবকে সাবধান করেছিলেন।
'ঢেঁকি চাঁদের গেলেও ধান ভাঙে'
রহমান সাহেবের অতীত কি আর রাতুলের মা আয়েশা বেগম জানতেন?
অবশ্য তিনি কখনো জানতেও চাননি। ফলাফলে, একদিন প্রচন্ড ঝগড়ার পরিশেষে ঘর ছেড়েছেন ২৫ বছরের সংসার আর স্বামী-সন্তান রেখে!
কিছু গল্প দর্শকের ভাবনার মতোই মিলে যায়। মানুষ প্রায়শ নিজের ভুল বুঝতে পারে। ক্ষমা চায়।
ঠিক তেমনই রহমান সাহেবের ক্ষমা চাওয়ার কথা থাকলেও সায়েরার ৩৫ বছরের খামুক শরীরের কাছে তার ভালোবাসা হেরে গেছে।
কোন খোজ নেয়া হয়নি। খোজ পাওয়াও যায়নি!
তিনদিন পর খবরের কাগজে ছাপা হলো- 'হারিয়েছে! হারিয়েছে!'
সকালে ঘুম থেকে উঠে বেলকনির হেলানো চেয়ারে বসেছিলেন মিস্টার রহমান। ভেজা খোলা চুলে চায়ের কাপ নিয়ে পত্রিকা হাতে এগিয়ে এসে সায়রা বাকাহাসিতে বললেন, 'তোমার বউ হারিয়েছে!'
রহমান সাহেবও হাসি দিলেন বৈকি!
দারুণ অট্টহাসি !
কিন্তু, কেউ বোঝেনি সে হাসির অন্তরালে সায়রার সুখ ছিলো নাকি আয়েশার শোক।
বস্তুত, পৃথিবীর সবকিছু সকলের বুঝতে না চাওয়াটায় শ্রেয়!

ছবি: ইন্টারনেট

চট্টগ্রাম
০৯/০৬/২০১৮

রাতুল এবং করতোয়া (পর্ব- ০২)





নদীর পাড়ে বসে গালের উপর হাত দিয়ে ভাবছে কিশোর রাতুল। রাতুল যে কিশোর, সেটা তার বড় আপা রুনার কাছ থেকে জেনেছে। কিশোররা নাকি অতি প্রতিবাদী, অভিমানী আর একগুঁয়ে হয়।
রাতুল অবশ্য বুঝতে পেরেছে, নদীর পাড়ে সে প্রতিবাদী কিশোর হওয়ার কারণেই বসে আছে। অনেক ছোট্টবেলা থেকেই তার এ স্বভাব। কোন কিছুতে একটু এদিক ওদিক হলেই সে একা একা বসে থাকতো। কারো সাথেই কথা বলতো না। অবশ্য, রহমান সাহেব যখন অফিস শেষে বাসায় এসে 'রাতুলের মা কই গো? একগ্লাস পানি দাও' বলতেন, রাতুল অভিমানের মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে আরো কিছুটা বাঁকিয়ে বসে থাকতো। কারণ, বাবার কাছে এ অভিমান ভাঙানো কোন ব্যপারই না।
তিনি পিছন থেকে এসে ছেলেকে চুপটি করে কাঁধে তুলে নিয়ে 'আমার আব্বা সবার রাজা, রাজাকে সাজা দিতে নেই' বললেই সে টপটপ চোখের পানি ছেড়ে সব বলে দিতো বাবাকে। বাবা তৎক্ষণাৎ সবাইকে বকা দিতো। আর ওকে ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাট এনে দেয়ার কথা বলতো।
এখনো মনে হচ্ছে, বাবা যেন তার মাথায় হাত রেখে বলবে, 'বাবা আয়, ঘরে চল'। কিন্তু, সে জানে বাবা আসবেনা। বাবা যে আর বাবা নেই!
চোখ দিয়ে পানি ঝরতে শুরু করেছে রাতুলের। না, এ পানি বাবাকে অভিমানের কথা ব্যক্ত করে বলার পর টপটপিয়ে পড়া পানি না। এগুলো মনের মধ্যে জমা থাকা প্রচণ্ড ঘৃণা আর ক্রোধের কারণে ঝরছে।মাঝেমাঝে মনে হয়, খারাপ বাবাদের চেয়ে রাক্ষসী করতোয়াই ভালো।
করতোয়া মন খারাপে কাউকে কেবল একবার মারে, আর পাষণ্ড বাবারা একটি পরিবারকে প্রতি বেলাতেই খুন করে!


ছবি: ইন্টারনেট

চট্টগ্রাম
০৪/০৬/১৮

রাতুল এবং করতোয়া (পর্ব- ০১)



বাবার অনাদরমাখা বকুনি খেয়ে এসে চুপচাপ ভাবতে বসেছে রাতুল। একটুও সাড়া শব্দ নেই আশেপাশে। থাকবেই বা কীভাবে? রাতুল তো আর মায়ের আঁচলের নিচে বসে ভাবছেনা। ৫০ বছরের কোন বুড়োর মতো অভিমানী হয়ে ঘর হতে পা ফেলে এসেছে প্রিয়জনদের একটু আড়ালে। বয়সে ছোট হতে পারে কিন্তু রাতুল জানে প্রিয়জনদের সামনে মনের মতো করে কান্না করার কোন সুযোগ নেই। নিজের ইচ্ছেমতো কান্না করতে হলে একটু দূরে নিরালায় যেতে হয়। যেখানে পরিচিত মানুষের আনাগোনা নেই। রাজ্জাক কলোনি পেরিয়ে সুবিশাল খোলা মাঠ। সারা মাঠকে রুপসী বানিয়ে রেখেছে দলেভরা সবুজ ঘাস। মাঠের ঘাসফুল রাতুলের মন কাড়ছেনা। ঘাসফড়িঙদের তিড়িংবিড়িং নাচেও আজ তার মন নেই। চুপচাপ মাঠ পেরিয়ে এসেছে সে। চুপচাপই তো হবে। এ নীরব জায়গায় সচরাচর কেউ আসেইনা। রাতুল আরো একবার এসেছিলো এ জায়গায়। সেইবার অবশ্য ঘাসফুল, ঘাসফড়িঙ কোনটাকেই অবজ্ঞা করেনি সে। সবগুলোকে প্রিয় বানিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু, আজ যে রাতুলের মন খারাপ। আর মন খারাপের সময় সে প্রিয় কারো সাথেই সময় কাটাতে পারেনা।
তাই অপ্রিয় করতোয়ার কাছে এসেছে সে। করতোয়া তার ভীষণ অপ্রিয়। গেলো বছর রাতুলের সবচেয়ে ভালো বন্ধুকে গ্রাস করেছিলো এ রাক্ষসী তটিনী!

ছবি: ইন্টারনেট

চট্টগ্রাম
৩১-০৫-১৮