মানুষ নিজের সত্য বয়স বলার চেয়ে বয়সের সীমাবদ্ধতা প্রকাশে বেশি আগ্রহী।
যেমন আপনার বয়স ২৯ না বলে আপনাকে যুবক বললে, আপনার মধ্যে দারুণ তৃপ্তি কাজ করবে।
আর মেয়েদের ক্ষেত্রে সে তৃপ্তি দ্বিগুণ হারে দীপ্তিমান। অবসর সময়ে এটা বলে পছন্দের কারো সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে পারেন।
আমার ইচ্ছে ছিলো রাতুলকে কিশোর হিসেবে লোকে চিনবে। বয়সে কী আসে যায়?
একজন কিশোরের সবচেয়ে বড় পরিচয় তার শারীরিক পরিবর্তন।
আমাদের রাতুলের মধ্যে সম্ভবত টেস্টোস্টেরনের এন্ড্রোজেনের জীবনযাত্রা শুরু হয়েছে। খামোকা আয়নার সামনে দাড়িয়ে চেহারা দেখে কয়েকবার করে। তাছাড়া, নিয়মিত মিলন বাবুর নরসুন্দরের দোকানটার দু'পাশের গ্লাসে একবার ডান আরেকবার বাম বাহু উত্তোলনের মাধ্যমে নিজেকে বড় জাহিরে ভেতরে ভেতরে তার মগ্নতা দেখা যাচ্ছে।
সে যাই হোক, রাতুল কিন্তু বয়সের আগেই বড় হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছে। থাকাও উচিৎ।
কারণ, জনগণের সমাজই রাতুলদের বড় করে ভীষণ তাড়াতাড়ি। লোকে ইতোমধ্যেই জেনেছে রহমান সাহেবের স্ত্রীর হদিস মিলছেনা। সম্ভবত, সংসার ভেঙেছে।
বড় লোকের সংসার ভাঙা-গড়া নিয়ে মানুষ প্রশ্ন তোলেনা। কারণ, প্রশ্ন সেখানেই তোলা যায় যেখানে 'পাত্তা' অন্তর্নিহিত। শতকোটি টাকার ব্যবসায়ী রহমান সাহেবের কাছে মানুষের প্রশ্ন কোন লোমও ছিড়তে পারবেনা সেটা সকলেরই জানা। তাই বাসায় বউ নাকি কাজের মেয়ে নিয়ে দিব্যি দিন কাটাচ্ছে তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। চুপচাপ যে যেভাবে পারে হজম করে। ঠিক যেমন করে দেখেও না দেখার ভান করে থাকে কতিপয় কাপুরুষেরা!
প্রায় তেরদিন হলো ঘরের বাইরে কিশোর রাতুলের অবস্থান। বলা যায়, রাত-দিনে পুরোটাতেই মায়ের সন্ধান করে চলেছে সে। কোথাও নেই তার প্রিয় মা। নাটাইয়ের মতো মা তাকে আপনছায়ায় রাখতো কিন্তু অনেকটা সুতোছেড়া ঘুড়ির মতো আজ অজানায় হারিয়ে গেছে। স্টেশনের কারো ব্যাগ বয়ে নিয়ে কিছু টাকা পায় সেটা দিয়ে মাঝেমাঝে খাওয়া হয়। কাজ না পেলে শুধু পানি পান করেই পার করে দেয় রাতুল। একেবারে ভালো না লাগা সত্ত্বেও বাসায় ফিরে যাওয়ার কোন ইচ্ছে তার বেঁচে নেই। স্টেশনটাই যেন প্রিয় ঘরে রুপ নিয়েছে। রাস্তার শত মানুষদের সাথে ঘুমের ঘোরে হঠাৎ মনে হয়, মা ফিরে এসেছে কোন ট্রেনের মতো।সারাদিন অফিস করে ফেরা কোন চাকুরীজীবীর মতো। পাখিদের মতো বা রাস্তার ধারের নিয়ন-সোডিয়াম আলোর মতো। সবই ফেরে এমনকি রাতুলের ঘুমও ফেরে জাগ্রতায়। ফেরে না শুধু রাতুলের ভালোবাসার মা।সায়রার প্রেম এতটাই শক্তিশালী যে, রহমান সাহেবের মনে স্ত্রী-সন্তানের জন্য মায়ার কোন অংশই আজ অবশিষ্ট নেই। মায়া এবং মেয়ে এ শব্দ দু'টো যেন আপন ভাইবোন। আপনি অধিকাংশ পুরুষে প্রেম পাবেন কিন্তু মায়া পাবেন না! মায়া আর প্রেমে অল্প হলেও পার্থক্য আছে বলে আমার মনে হয়। প্রেম ক্রমশ বৃদ্ধমান যেখানে মায়া চিরস্থায়ী। প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ বলে গেছেন-
'ব্যবহার করা কপালের টিপটার আঠা নষ্ট হলেও মেয়েরা সেটা যত্ন করে রেখে দেয়। একজোড়া কানের দুলের একটা হারিয়ে গেলেও অন্যটা ফেলে না।
পুরাতন শাড়িটা, ভাঙা চুড়িটা, নষ্ট হয়ে যাওয়া মোবাইল টা কাজে লাগবেনা জেনেও তুলে রাখে,সবকিছুর কারণ হল মায়া। মেয়েরা মায়ার টানে ফেলনা জিনিসও ফেলে না।'
লেখার খাতিরে কিছু চিরন্তন সত্যের প্রকাশ হোক।
একজন মেয়ে স্বাধীনতার সবটুকু ছেড়ে মায়ার টানেই নারী হয়ে যায়। দায়িত্ব নেয় কোন পরিবারের, সমাজের, সর্বোপরি পুরো দেশের। আগলে রাখে স্বামী, সন্তান, শশুড়-শাশুড়ীসহ পরিবারের সবাইকে। গড়ে তুলে স্থায়ী মায়ার বাঁধন। অথচ, রহমান সাহেবদের প্রায়শ দেখা যায় প্রেমবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে যেখানে উদরে জন্মানো মায়াটাকে টার্গেট করে দুর্বার এগিয়ে চলে কোন নারীর মায়া স্থায়িত্বকরণের প্রতিযোগীতা।রহমান সাহেবেরা সায়েরাদের তুলুন যৌবনের কাছে বারংবার আছাড় খেলেও আয়েশারা স্বামীহারা হয়েও মায়া খোঁজে ফেরে। এটাও ঠিক, পৃথিবীর সব নারীই আয়েশা নয় আবার সব পুরুষও নন মিষ্টার রহমান।
ছবিঃ ইন্টারনেট
চট্টগ্রাম
২০/১১/২০১৮




