নদীর পাড়ে বসে গালের উপর হাত দিয়ে ভাবছে কিশোর রাতুল। রাতুল যে কিশোর, সেটা তার বড় আপা রুনার কাছ থেকে জেনেছে। কিশোররা নাকি অতি প্রতিবাদী, অভিমানী আর একগুঁয়ে হয়।
রাতুল অবশ্য বুঝতে পেরেছে, নদীর পাড়ে সে প্রতিবাদী কিশোর হওয়ার কারণেই বসে আছে। অনেক ছোট্টবেলা থেকেই তার এ স্বভাব। কোন কিছুতে একটু এদিক ওদিক হলেই সে একা একা বসে থাকতো। কারো সাথেই কথা বলতো না। অবশ্য, রহমান সাহেব যখন অফিস শেষে বাসায় এসে 'রাতুলের মা কই গো? একগ্লাস পানি দাও' বলতেন, রাতুল অভিমানের মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে আরো কিছুটা বাঁকিয়ে বসে থাকতো। কারণ, বাবার কাছে এ অভিমান ভাঙানো কোন ব্যপারই না।
তিনি পিছন থেকে এসে ছেলেকে চুপটি করে কাঁধে তুলে নিয়ে 'আমার আব্বা সবার রাজা, রাজাকে সাজা দিতে নেই' বললেই সে টপটপ চোখের পানি ছেড়ে সব বলে দিতো বাবাকে। বাবা তৎক্ষণাৎ সবাইকে বকা দিতো। আর ওকে ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাট এনে দেয়ার কথা বলতো।
এখনো মনে হচ্ছে, বাবা যেন তার মাথায় হাত রেখে বলবে, 'বাবা আয়, ঘরে চল'। কিন্তু, সে জানে বাবা আসবেনা। বাবা যে আর বাবা নেই!
চোখ দিয়ে পানি ঝরতে শুরু করেছে রাতুলের। না, এ পানি বাবাকে অভিমানের কথা ব্যক্ত করে বলার পর টপটপিয়ে পড়া পানি না। এগুলো মনের মধ্যে জমা থাকা প্রচণ্ড ঘৃণা আর ক্রোধের কারণে ঝরছে।মাঝেমাঝে মনে হয়, খারাপ বাবাদের চেয়ে রাক্ষসী করতোয়াই ভালো।
করতোয়া মন খারাপে কাউকে কেবল একবার মারে, আর পাষণ্ড বাবারা একটি পরিবারকে প্রতি বেলাতেই খুন করে!
ছবি: ইন্টারনেট
চট্টগ্রাম
০৪/০৬/১৮

No comments:
Post a Comment