Tuesday, December 18, 2018

রাতুল এবং করতোয়া (পর্ব - ০৩)



করতোয়ার পাড়ে বসেই সহস্রবার বোঝার চেষ্টা করেও বাবার অস্বাভাবিক মন্দনের কোন কিনারা খুঁজে বের করতে পারেনি রাতুল।
মানুষের বাহ্যিকের চেয়ে নাকি মনের পরিবর্তন দ্রুত ঘটে।
সম্ভবত, রাতুলের বাবারও এমন হয়েছে!
৪৭ বছরের আধবুড়ো যেন ১৭ বছরের টগবগে যুবকে রুপ নিতে চাচ্ছে!
বাবা প্রথম যেদিন দ্বিতীয় মাকে ফ্রিকোয়েন্টলি এসএমএস-কল দিচ্ছিলো, সেটা রাতুলসহ বাসার সকলেরই বোধগম্য হওয়ার মতোই। তবে বাবা কি সবাইকে জানিয়েই যুবক সাজতে চেয়েছিলেন?
মিসেস সায়রাকে রাতুলের মা ডাকতে মোটেও পছন্দ না। নিজের মায়ের আচলের সুখ কি পরপুরুষে মত্ত্ব মিসেস সায়েরার কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব!
মা ডাকুক না ডাকুক তাতে কী আসে যায়?
রিটায়ার্ড স্বামী প্রফেসর কামাল হোসেনের প্রতি তিনি আর কতোইবা যত্নশীলা হবেন?
উত্তরপত্রে কিছু নাম্বার বাড়তি পাওয়ার খাতিরে ২১ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীর সাথে স্যারদের প্রেম হতেই পারে! তাই বলে শেষমেশ বুড়োটাই কপালে জুটবে সেটা কি আর সায়রার জানা ছিলো?
সবেতো ৩৫। বাকিটা নাহয় নিজের সুখ নিশ্চিত করতে এলিট পার্সোনালিটির মি: রহমানের খাটেই কাটিয়ে দেয়া যাবে। বেশ কয়েকবছর ধরে এমন কাউকেই তো খুজছিলেন তিনি।
রাতুলের মা অবশ্যই প্রথম থেকেই এসব ব্যপারে আর কোন অগ্রগতি না দেখার ব্যপারে রহমান সাহেবকে সাবধান করেছিলেন।
'ঢেঁকি চাঁদের গেলেও ধান ভাঙে'
রহমান সাহেবের অতীত কি আর রাতুলের মা আয়েশা বেগম জানতেন?
অবশ্য তিনি কখনো জানতেও চাননি। ফলাফলে, একদিন প্রচন্ড ঝগড়ার পরিশেষে ঘর ছেড়েছেন ২৫ বছরের সংসার আর স্বামী-সন্তান রেখে!
কিছু গল্প দর্শকের ভাবনার মতোই মিলে যায়। মানুষ প্রায়শ নিজের ভুল বুঝতে পারে। ক্ষমা চায়।
ঠিক তেমনই রহমান সাহেবের ক্ষমা চাওয়ার কথা থাকলেও সায়েরার ৩৫ বছরের খামুক শরীরের কাছে তার ভালোবাসা হেরে গেছে।
কোন খোজ নেয়া হয়নি। খোজ পাওয়াও যায়নি!
তিনদিন পর খবরের কাগজে ছাপা হলো- 'হারিয়েছে! হারিয়েছে!'
সকালে ঘুম থেকে উঠে বেলকনির হেলানো চেয়ারে বসেছিলেন মিস্টার রহমান। ভেজা খোলা চুলে চায়ের কাপ নিয়ে পত্রিকা হাতে এগিয়ে এসে সায়রা বাকাহাসিতে বললেন, 'তোমার বউ হারিয়েছে!'
রহমান সাহেবও হাসি দিলেন বৈকি!
দারুণ অট্টহাসি !
কিন্তু, কেউ বোঝেনি সে হাসির অন্তরালে সায়রার সুখ ছিলো নাকি আয়েশার শোক।
বস্তুত, পৃথিবীর সবকিছু সকলের বুঝতে না চাওয়াটায় শ্রেয়!

ছবি: ইন্টারনেট

চট্টগ্রাম
০৯/০৬/২০১৮

No comments:

Post a Comment