Friday, January 3, 2020

পরিসংখ্যান

-তুমি কিন্তু পরিসংখ্যানের গণিতে একবার প্যাঁচাল খেয়ে গিয়েছিলে। --হতে পারে। মনে নেই। -আমার মনে আছে। তোমার বেগতিক চেহারাটা আমায় সেদিন পৈশাচিক আনন্দ দিয়েছিলো। --বলো কী? আমার সত্যিই মনে নেই। এতো গুরুতর আমায় কোথায় সান্ত্বনা দেবে তা না তুমি মজা নিয়েছিলে। পাষাণ একটা। --তো কী? আমার আগুন চোখের শিখা তোমায় জ্বালাতে পারলোনা। ওই ক্রমযোজিত গণসংখ্যায় তোমার যত মনোযোগ। -ভালোবাসতে? --কই নাতো। অতশত বুঝতাম নাকি? রুটিনের পর রুটিন করে পড়তে চাওয়ার মতো আমিতো ছিলাম না। দ্যানজ্ঞান, সিলেবাস কিংবা রুটিন আমার সবইতো তুমিই ছিলে। আমার পুরানো মলাটের পাতায় পাতায় তোমার নাম পাওয়া গেলে বুঝি ভালোবাসতাম ভেবে নিতে? -আরেহ না। আমার ভালোবাসা ছিলো তোমার পেতে দেয়া হাতে। মারের জন্য ভীত হয়ে কোনদিন অসহায়ও মনে হয়নি তোমায়। আমি দারুণ উচ্ছাসে মার দিতাম। কতটা ভালোবাসলে একটা মানুষ প্রতিদিন তিক্ত ভালোবাসা নিতে এরকম হাত পেতে দিতো। একটা বিষয়ে বারংবার ইচ্ছাকৃত ব্যর্থ হতো। আমি প্রতিটি বিষয়ে তোমার নম্বর দেখতাম। গণিতে এতো কম নম্বর পাওয়ার মতো তুমি কোনদিনই ছিলেনা। --হ্যাঁ। তোমার জন্য ছিলাম শুধু। শুধুই তোমার জন্য। কত প্রেমের চিঠির প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। মনে আছে সজলের কথা? -কোন সজল? তোমাদের শ্রেণিতে যে সবসময় প্রথম হতো? --জ্বী জ্বী। এতো সহজে মনে পড়ে গেলো! -আহা! ছেলেটা। হুট করে বিদেশ চলে গিয়েছিলো। --জ্বী না। সজল দেশেই ছিলো। আমার প্রেমের প্রত্যাখ্যানে কষ্ট পেয়ে সে তখনই ঢাকায় চলে আসে। এতোটা কষ্ট পাবে ভাবিনি। পরে আমার মন খারাপ হয়েছিলো ওর জন্য। তাতে কী? তুমিই আমার সব ছিলে। সবাই জানতো, আমি তোমার জন্য পাগল ছিলাম। -আমিও জানতাম কিন্তু মানতাম না। --কেন কেন? -শিক্ষক-ছাত্রীতে প্রেম হয়না। --সংসার হয়? -দিব্যি হচ্ছে তো। প্রায় নয় বছর না? --বাবা যখন বলেছিলো, 'তোর জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব আছে।' আমি না পারি মরে যাই। যখন সে প্রস্তাবের শেষে তুমি এলে আমি এবার খুশিতে মরে যায়। তোমার কারণে মরতে চাওয়াতেও অদ্ভুত প্রেম আছে। -সেটা নিতান্তই তোমার গুণ। তুমি একজন পরিপূর্ণ প্রেমিকা। --কেন আমায় খুঁজে নিয়েছিলে? -ভালোবাসতাম বলে। --এতোবছর পরেও পারলে? -পারলাম তো। ভালোবাসা সময় সাপেক্ষ না, দূরত্ব সাপেক্ষ ও না। ভালোবাসার কোন সংজ্ঞা নাই। ভালোবাসায় দ্বৈততা আর একনিষ্ঠতা থাকলেই চলে। তুমি স্কুল শেষ করে চলে গেলে। আমার কেমন জানি শুণ্যতা অনুভূত হতে লাগলো। নিজেকে হাজার হারিয়ে তোমাতেই খুঁজে পেতাম। বুঝতে বাকি ছিলোনা আমি কেবল শিক্ষক নয় একজন প্রেমিক। --আমি যদি হারিয়ে যেতাম? -ভালোবাসা হারায় না, তুমিও হারাতে না। আমিও হারাতে দিতাম বলে মনে হয়না। --অনুসরণ করতে? -সবসময়। সজলের সাথে ফের দেখার পরেও তোমার প্রেমে নতুন হাওয়া না লাগাটা আমাকে ভালোবাসতে বেগবান করেছিলো। তুমি এক অদ্ভুত প্রেমিকা আমার। -এতো ভালোবাসো? -ছয় বছরের অপেক্ষা আর নিষ্প্রাণতা বয়ে চলা আর একবার প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় যুগযুগ কাটিয়ে দেয়ার পণ করেছিলাম জানলে বুঝি ভালোবাসতাম ভেবে নিতে? --আরেহ না। আমার ভালোবাসা ছিলো তোমার চুপিসারে দেখে যাওয়াতে। তুমি কী ভেবেছিলে মেয়েদের চাহনি শুধু সম্মুখেই? কলেজে যেতাম যখন পেছনে রিক্সায় তোমায় খুঁজে পেতাম, আমার বুড়ো বাবাকে যখন কাকুতি -মিনতি করে বলতে এলে 'চাচা, আমি আপনার ছেলে হতে চাই।' আমার চেয়ে সৌভাগ্যবান প্রেমিকা আর কে হতে পারে? তুমি কেবল শিক্ষক নও, তুমি প্রেমিক। আমি হাজার বছর অপেক্ষায় থাকতেও রাজি ছিলাম। -আচ্ছা, ক্রমযোজিত গণসংখ্যায় সমস্যা আছে? --একদম নেই। কিন্তু, তোমার চেহারা বেগতিক লালা হয়ে যাচ্ছে কেন? -ভালোবাসায়। চট্টগ্রাম ০৪/১২/১৯

No comments:

Post a Comment