Saturday, March 10, 2018

সস্তাপ্রেমী

গত বর্ষাতে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় ফিরছিলাম।
মনে হচ্ছিলো কয়েক বর্ষার ধারা অপেক্ষা আমার মনের আনন্দ আরো ভারী হবে!
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ দেখছিলাম, দেখছিলাম প্রবল বৃষ্টির অনাচারে তৈরি কৃত্রিম জোয়ারে আটকে যাওয়া মোটরযানগুলো।
অসহায়ত্বগুলোকে হায়েনাদের চোখে দেখছিলাম যেন!
হাঁটু-উপরী আবর্জনাস্নাত পানিকেও রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছিলো।
একইপথে সর্বোপরী সাত-আট পা এগিয়ে ছিলো ফর্সা পায়ের অধিকারিণী!
বয়স জোর করে হলেও আমি অপেক্ষা বছর দুয়েক কম হবে।
গতবছরে আমি ছিলাম তেইশ। স্বভাবতই প্রেমে পড়ার বয়স,ভালোবাসার বয়স।
মেয়েটি যেভাবে বারবার পেছনে তাকাচ্ছিলো তার মায়াভরা চোখে সঠিকভাবে কেউ একবার তাকাতে পারলেই আমি নিশ্চিত সে দশবার প্রেমে পড়বে।
আমিও পড়েছিলাম বৈকি!
প্রেম? এটা এমন বিশালাকার গর্ত যেন, তার উপরে বিশেষত ছেলেরা বারবার পড়ে!
ভালো দিক হচ্ছে এটা কম্পিউটারের অস্থায়ী মেমোরির মতো কাজ করে!
তাই,একটেম্পুতে বসেই চকবাজার, কাজীর দেউড়ী, আগ্রাবাদ সর্বত্রই প্রেমে পড়া সম্ভব!
নিজেই নিজেকে ঝাড়ি দিয়ে বললাম 'সস্তাপ্রেমী' !
একটু জোরে পা চালিয়ে মিটার দুয়েক পার হতেই 'ভাইয়া! একটু দাঁড়াবেন? "
বুঝে উঠার আগেই যেন বুঝে নিয়েছিলাম আওয়াজ পেছন থেকেই এসেছে!
-দাঁড়িয়ে গেলাম।
-আমার ভয় করছে, আপনি একটু আস্তে আস্তে যাবেন?
-ঠিক আছে।
দুই মিনিটের পথ পেরোতে মনে হচ্ছিলো পাঁচমিনিটের উপরে লাগবে!
আবার আওয়াজ!
-ভাইয়া,আমার হাতটা ধরুন প্লীজ! আমার প্রচন্ড ভয় হচ্ছে!!
একটু আগেই প্রেমিক হতে চাওয়া 'আমি' হতবাক! হাতটা ধরারও সাহস পাচ্ছিলাম না।
কারণ, ঐ মুহুর্তে প্রেমের চেয়ে আমাকে যেটা নাড়া দিচ্ছিলো সেটা হচ্ছে মানবিকতার 'হেয়ালিপনা'।
যত্রতত্র প্রেমে পড়াও এটার অন্তর্ভুক্ত। ওটা স্বভাবতই প্রেম না, মোহ।
আর মোহের কাছে পরাজিত হওয়ারা কাপুরুষ। সেদিন নিজেকেও 'কাপুরুষ' মনে হয়েছিলো।
এরপরও,বাড়িয়ে দেয়া হাত ধরে পার হওয়া শেষে জানতে পারলাম তার গন্তব্য 'বালতি কোম্পানি'।
মেয়েটি কাতালগঞ্জ হয়ে বাসায় যাচ্ছিলো।
আর,কথা শেষে সে যখন বলেছিলো -'ভাইয়া, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ'
-পেছনে ফিরে দেখি আমার গন্তব্যের চেয়ে আরো ৩মিনিট সামনে চলে গিয়েছিলাম!!