ভার্সিটি জীবন
নিয়ে লেখার
কিছু নেই
আমার!
লেখালেখি ব্যপারটা
আসলে অনেকটাই
দিক নির্দেশিত
হয়ে থাকে।
ঠিক এ
কারণেই কবিদের
কবিতায় কিংবা
লেখকদের গল্পে
যথাযথ শিরোনাম
থাকে।আমার এটাকে
লেখা না
বলে 'স্মৃতিচারণ'
বললেই ভালো
মানাবে। কারণ,স্মৃতির
স্থায়ী কোন
শিরোনাম থাকেনা।
ইচ্ছে ছিলো
মেডিকেলে পড়বো।
সবাইকে দিয়ে
সবকিছু হয়না
বলেই হয়তো
আমাকে দিয়ে
ডাক্তারী পড়াশোনা
হয়নি! প্রবল
অনিচ্ছা সত্ত্বেও
আমি কেন
ইঞ্জিয়ারিং পড়াশোনা
পছন্দ করেছিলাম
সেটাও ঠিক
মনে নেই।
তবে মনে
আছে প্রিমিয়ারে
কার সাথে
আমার প্রথম
পরিচয় আর
কে আমার
প্রথম বন্ধু!ছেলেটিকে
আমি নাম
ধরে খুব
কমই ডাকতাম।
তার নাম
মুখ থেকে
বের হওয়ার
আগেই 'মামু'
শব্দটি বের
হয়ে যায়!
তাই আমার
মামুর নামটি
তোলাই থাকুক।আমরা
কোনদিন শুদ্ধ
বাংলায় কথা
বলতাম না।
তাই ভদ্রদের
'মামা' শব্দটিও
আমাদের কথাবার্তায়
আসতোনা!আমাদের
কথোপকথনে 'মামু'
এতো বেশি
প্রভাব ফেলেছিলো
যে, স্বয়ং
ক্লাসমেটদেরও অনেকে
আমাদের সম্পর্ক
আপন মামা-ভাগিনা
মনে করতো।
আমার বন্ধু
প্রিয়ম তো
মাত্র কয়দিন
আগেই সত্যটা
জেনেছিলো।আচ্ছা, আপনাদের
কয়জন প্রিয়ম
ছেলেটিকে চেনেন?সত্যি
বলতে হয়তো
অনেকেই চেনেন
না। আমিও
তাকে পুরো
৪-৫টা
সেমিষ্টার চেনার
চেষ্টা করিনি!ভার্সিটি
জীবনটায় এমন
যে, গ্রুপভিত্তিক
বন্ধুত্বটা জমে
উঠতেই বাকিদের
আমরা ভুলতে
শুরু করি।
আমাদের ক্লাসের
বাকি সবার
চেয়ে প্রিয়মই
স্যারদের কাছে
সুপরিচিত ছিলো!আমার
এক শিক্ষক
বলেছিলেন 'সুপরিচিত
হতে দুইটা
উপায় আছে।
একটা হচ্ছে
সবার কাছে
খুব ভালো
হয়ে, আরেকটা
খুব খারাপ
হয়ে। প্রিয়ম
ভালোবেসে শুধু
স্যারদের নয়,ক্লাসের
সবাইকেই প্যারা
দিত। ক্লাসে
তার ভালবাসা
পেতে পেতে
তিক্ত হয়েছিলো
কামরুল আর
মিসবাহ।তাই ভালোবাসার
এই যন্ত্রটিকে
অসহনীয় মনে
করে বাকি
প্যারা নিতে
ইরফান আর
টুটুলকে সোপর্দ
করে। বাকিটা
ইতিহাস...
প্রিয়ম ইতিহাসে
লক্ষণীয় পদাচরণ
ছিলো আমার
বন্ধু ইকবালের।
ইকবাল হলো
ক্লাসের সবচেয়ে
সুন্দর হাসি
দিতে পারা
ছেলেটি।সেই এত
সুন্দর করে
হাসতে পারতো
যে, তার
হাসি শুরু
হলে পাশে
বিপুল আনন্দে
হাসতে থাকা
লোকটিও নিশ্চুপ
হতে রাজি!গীতিকা
আর বৃন্তু
ফাইনাল সেমিষ্টার
শেষের দিন
'এই
হাসি মিস
করবো বলে"
ফেইসবুক স্ট্যাটাসও
দিয়েছিলো।আর সেই
স্ট্যাটাস আমাদের
আইফোন ইরফান
তার আইফোনে
সেইভ করে
পরদিন জিয়াকে
দেয় যাতে
সে ঘোষণা
করে দেয়
'ইকবালই
ক্লাসের অন্যতম
হাসিদাতা"!এরপরও
ইকবালকে শ্রেষ্ট
হাসিদাতা বলা
যাবেনা! কারণ,
এই শ্রেষ্ঠত্ত্বের
পুরোটা জুড়ে
আছে বান্ধবী
অ্যানীর। ব্যতিক্রমী
মধুমাখা হাসিতে
সাথীর মন
ভালো করে
দিতে কিঞ্চিত
কষ্টও করতে
হয়না তার।সাথী
হচ্ছে ক্লাসের
হালকা স্বাস্থ্যবান
মেয়েটি। আমরা
তাকে মোটা
মনে করিনা,কেবল
সাস্থ্যবান বলি।
এতেও তার
অভিমানের ঝড়ে
উড়ে যায়
ঐ পাড়ার
শাকিল-আয়েশারা!
ঐ পাড়ের
সাথে আমাদের
নৌ-চলাচল
একেবারেই কম।
পুরুষেরা হাটে
এলে কুশল
বিনিময় হয়
সর্বোপরি। তবে
সেমিষ্টারের শেষেরদিকে
'বরদান' হওয়াতে
সম্পর্কে নতুন
জোয়ার আসে
সে পাড়েও।
শাওন,সোহেল,সাজ্জাদ,
আশিক এরা
সুদর্শন বরপুত্র
সবাই। বেলাশেষে,
ওদের আমরা
ঐ পাড়ায়
বসতি গড়তে
দেখেছি। দেখেছি
সে পাড়ার
হাসনাত,সানজিদ,সাদ্দাম,জাহিদ,সজিব,রাশেদদের
সাথে। একই
ঝড়ে এপারের
নাবিলা,বৃষ্টি,
প্রিয়ঙ্করাও দেখেছিলাম
সেখানে পাড়ি
জমিয়েছিলো।সেই পাড়ের
মেয়েদের নিয়ে
বলার মতো
কোন অভিজ্ঞতা
আমার নেই।
বুশরা-সাথিলাদের
সাথে সর্বোপরি
হাই-হ্যালো
শুরুর দিকে।
এরপরে মহাকাল!তবে
দোলা, লাকী,
রওমান ওরা
নির্দোষ, একটু
বেশিই ভালো
স্বভাবের। যাহোক,
ঐ পাড়ার
লোকজনের সাথে
অভিমানে তিক্ত
হলে অ্যানি
তার হাসি
দিয়েই সাথীকে
মনোবেদনরিক্ত করে
দিত!মিসেস
করিম তো
অনেক কষ্ট
করেও এই
হাসি রপ্ত
করতে পারেনি!
তবে সে
পেরেছে ক্লাসের
সব ছেলেদের
মন জয়
করতে!নির্দ্বিধায়
নিজের নোটখাতা
বাকীদের সাথে
শেয়ার করতো।
সবচেয়ে গোছালো
নোটখাতা করেও
মনোভাবের ভিন্নতায়
বন্ধুদের সমাদররিক্ত
হয়েছিলো অদিতা।
অদিতা ক্লাসের
চুপচাপ স্বভাবের
মেয়েটি, আটসেমিষ্টার
শেষে বুঝতে
শিখেছে বন্ধুত্বের
মর্ম কতটুকু!
আয়েশা-জোসনাদের
তো আমরা
ছোটবেলা থেকেই
আপু ডাকি।
জয়ের গোপন
বান্ধবী রুচি।
তার আবার
কলিকেও বান্ধবী
হিসেবে ভালো
লাগে।কলি-অদিতা-বৃষ্টি
এগুলো শুধু
ক্লাসের মেয়েদের
নাম নয়,
ফটোগ্রাফার আকাশের
তিন তিনটা
ছোটবোন!এসব
বোনে বিশ্বাস
নেই আমাদের
ধ্রুব দা'র।
তিনি তো
ক্লাসে বিপুল
মনোযোগীদের একজন।
আর ক্লাসে
মনোযোগীরা সহজে
বোন বানায়না।তবে
ধ্রুব দা'র
আপন ভাইয়ের
মতো বলা
চলে ক্লাসের
রিপ্রেসেন্টেটিভ আনানকে।
আনান কিন্তু
খুব একটা
ভালো স্বভাবের
নয়! কিঞ্চিত
স্বার্থপরতা আছেই
বলা যায়।
এটা কে
যেন পরীক্ষাশেষে
বলেছিল!পরীক্ষায়
সবচেয়ে সাহায্যকারী
ভাইটির নাম
দেলোয়ার হোসেন
টুটুল। এমনও
দেখা গেছে
জীবনের রিস্ক
নিয়ে সে
নিজের খাতা
অপরপাত্রে দান
করেছে!
বেলা ১১টার
দিকে প্রবর্তকের
কোণার হোটেলটায়
'কিমাপুরি' না
খেলেই যেন
সারাদিন উপোষ
থাকে সুগত।
সুগত হচ্ছে
সায়িদের মতোফাঁকিবাজ
লেভেলের।সায়িদ ক্লাসের
সবচেয়ে বেশি
অনুপস্থিত থাকা
ব্যক্তি! সায়িদ-কামরুল-এরশাদ
একটি না
আঁকা ত্রিভুজ
যেন। এরা
ছাড়াও চুপিসারে
ফাঁকিবাজি করতে
দেখেছি আশিক-আলীদের।ক্লাসে
একদিন আসে
তো তিনদিন
নাই। ওরা
ভার্সিটিতে আসতো
মনে হয়
শুধু কাজল
মামার দোকানের
চা এর
অর্ডার দিতে!
একটা চায়ের
কাপে অবশ্যই
ইয়াসি ভাইয়ের
ভাগ থাকতো।দোকানের
আশেপাশে দাঁড়িয়ে
ছোট ভাই-বোনদের
সাথে সুচেয়ে
নিখুঁত সম্পর্ক
গড়তে জানে
রাহুল।ক্লাসের বন্ধুদের
চেয়ে ছোট
ভাই-বোনগুলোর
সাথেই যেন
তার বন্ধুত্ব
বেশি। রাহুল
হচ্ছে ক্লাসের
সবচেয়ে গুছালো
ব্যবস্থাপক। ঠিক
সে জন্যই
রাহুলকে বেশি
পছন্দ লীডার
জাবেদের!জাবেদ
এমন একটা
ছেলে যার
হাত নেই
এমন যায়গা
খুবই কম
পাওয়া যায়।
একমাত্র নোয়াখালীর
বলেই এটা
সম্ভব বলে
দাবী করেছে
মিজান। শেষমেশ
জাবেদের কৃতকর্মে
মুগ্ধ হয়ে
লীডারশিপ নিয়ে
আগ্রহী হতে
দেখেছিলাম মিজানকেও!
কিন্তু, এসব
লীডারশীপে ভাত
নেই বলে
জোরালো প্রতিবাদী
মিজানেরই একান্ত
বন্ধু তন্ময়।
তন্ময় ক্লাসে
দেরীতে উপস্থিত
হওয়াদের মধ্যে
অন্যতম। অনেকসময়
ক্লাসে প্রবেশের
সময় মনে
হতেও পারে
এই বুঝি
তন্ময় ঘুম
থেকে উঠে
এসেছে! তন্ময়ের
স্পেশালিটি ধরতে
গেলে তা
হচ্ছে বকাঝকা
করা আর
বাঁশ দেয়া।এই
বাঁশ সবচেয়ে
বেশি দেয়া
হয়েছে বিশিষ্ট
রাজনীতিবিদ তেলের
কোম্পানি জামিলকে।
জামিল নিজেকে
শো অফ
করার চেষ্টা
করলেই বাঁশ
পেয়ে যেত
বিনা নোটিশে!জামিলের
সবচেয়ে কাছের
বান্ধবী হচ্ছে
শামা। নামটি
জটিল প্রকৃতির
হওয়ায় আমি
তাকে স্যাম
ডাকতাম।একটু নিচু
স্বভাবের মেয়ে
স্যাম। একই
ধরণের নিচু
স্বভাব মিজানের।
তাই তাকে
ব্যঙ্গ করে
আমরা বেডি
মিজান ডাকি।
তবে ওদের
এলাকা হাটহাজারীতে
সে নাকি
বড় নেতা।
বড় বড়
বক্তৃতা দেয়!এর
প্রমান পেতাম
তারই এলাকার
ইমন এবং
রিয়াজ থেকে।
মাসুদ, বাবা
সায়িদ, মোর্শেদ,
ফয়সাল, রাশেদ,
মৃন্ময়, ইমতিয়াজ,
বাশারাত এগুলো
একেকটা আমাদের
অপূর্ণতা।
পূর্ণতা হিসেবে
যা পেয়েছি
তা হচ্ছে
জাইল্লাপাড়া বিচ
ভ্রমণ, বোয়ালখালী
ট্রীপ, কাপ্তাইয়ে
একদিন,মিশণ
টু ঢাকা
আর মেডিকেলের মাঠে তিন সেকশনের ক্রিকেট
টুর্ণামেন্ট। সবচেয়ে
বড় পূর্ণতাটি
ছিলো মেডিকেলের
শাহ আলম
(বীর উত্তম)
অডিটরিয়ামের সেই
ঝমকালো সন্ধ্যা।
এপ্রিল ৩,
২০১৭
রাত ১০টা
১৭ মিনিট।
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
